আপনি কি জানেন শনি গ্রহের বলয় আসলে কী ?
আচ্ছা, আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, "সৌরজগতের সবচেয়ে সুন্দর গ্রহের নাম কি?" আপনার উত্তর হবে হয়ত পৃথিবী। তা অবশ্য ভুল কিছু বলা হবেনা। কিন্তু পৃথিবীকে পাশে রেখে যদি সুন্দরতম গ্রহ খোজা হয় ,তবে নিশ্চিত রূপে নাম উঠে আসবে শনি গ্রহের কথা। গ্রহটির অনিন্দ্য সুন্দর বলয় তাকে বাকি সকল গ্রহের চেয়ে আলাদা করে রেখেছে সূপ্রাচীন কাল ধরে। কিন্তু মনে অনেক প্রশ্ন জাগে, শনি গ্রহের বলয় থাকে কেন ? শনি গ্রহের বলয় আসলে কী? শনি ছাড়া অন্য কোন গ্রহে বলয় আছে? থাকলেও কেনই বা তা আমরা দেখিনা? এসকল প্রস্নের উত্তর থাকছে "জ্ঞানী বাবা!"র আজকের লেখায়…
বলয় কী ?
সুবিশাল মহাকাশে অসংখ্য-অগণিত মহাজাগতিক বস্তু-কণা বিরাজ করছে। কখনো কখনো এই মহাজাগতিক বস্তু-কণাগুলো মধ্যাকার্ষণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একটি বড় মহাজাগতিক বস্তু-কণাকে ঘিরে পরিভ্রমণ শুরু করে। যাকে দূর থেকে দেখ্তে গোলাকার চ্যাপ্টা চাকতির ন্যায় দেখায় , একেই বলয় বা গ্রহীয় বলয় বা প্লেনেটারি রিং বলে।
শনি গ্রহের বলয় আসলে কী ?
সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্য শনি অন্যতম। যদিও গ্রহটি প্রধানত তার সুবিখ্যাত রিংয়ের জন্যই বেশি পরিচিত। ১৬১০ সালে বিজ্ঞানী "গ্যালিলিও গ্যালিলি" সর্ব প্রথম শনির বলয় পর্যবেক্ষণ করেন নিজের উদ্ভাবিত টেলিস্কোপে। তিনি শনির দুটি বড় উপগ্রহ থাকার ব্যাপারটিও অনুমান করেছিলেন। কিন্তু তার টেলিস্কোপটি প্রযুক্তিগতভাবে দুর্বল থাকায় সেকালে শনি কিংবা এর বলয় সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি।
১৬১০ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি সর্ব প্রথম শনির বলয় পর্যবেক্ষণ করেন নিজের উদ্ভাবিত টেলিস্কোপে। তিনি শনির দুটি বড় উপগ্রহ থাকার ব্যাপারটিও অনুমান করেছিলেন
পরবর্তীতে,টেলিস্কোপ যথেষ্ট উন্নত হওয়ার পর ১৬৫৫ সালে ডাচ বিজ্ঞানী "ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস" প্রথম শনির বলয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত করেন। প্রথম দিকে বিগ্গানী মহল ভাব্ত গ্রহীয় বলয় বা শনির বলয় বুঝি কঠিন পদার্থের তৈরি কোন স্তর বিশেষ। তবে তবে বর্তমানে আমরা জানি যে, শনি বা যেকোন মহাজাগতিক বলয়ই কঠিন কোন স্তর নয় ,গ্রহীয় বলয় মূলত লাখো কোটি ক্ষুদ্র-বৃহত বস্তু-কণার মিশেলে গঠিত বিশাল গ্রহীয় চাকতি। এই বস্তু-কণা গুলো নুড়ি পাথরের ন্যায় ক্ষুদ্রও হতে পারে আবার অতিকায় বড় দালানের চেয়েও বড় হতে পারে।
পরবর্তীকালে, বিজ্ঞানীদের কঠিন বলয় ধারণাটি অবলুপ্ত হয়। এবং জানা যায় ,যে বলয় কে তারা এতদ যাবদ কথন স্তর ভেবেছিলেন তা মূলত বরফের তৈরী একটি ঘন স্তর মাত্র। সময়ের সাথে সাথে টেলিস্কোপের উন্নতির সাথে সাথে আমরা আরো জানতে পারলাম, এই বরফের ঘন চাকতিও আবার একক কোনো স্তর নয়. এই বিবরফের বলয়টি আবার বহু ভাগে বিভক্ত।
শনি গ্রহের বলয় থাকে কেন ?
মহাবিশ্বের সূচনালগ্ন থেকেই মহাকাশে অপরিমেয় পরিমান ধুলো-বালি, মহাজাগতিক বস্তু-কণা বিরাজ করছে। এসকল ধূলিকণার মেঘপুঞ্জ ভারী কোনো বস্তুর মধ্যাকর্ষণ বলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সেই ভারী বস্তুর চারপাশে আবর্তন শুরু করে. ফলস্বরূপ দেখা মেলে অনিন্দ্য সুন্দর গ্রহীয় বলয়ের।শনির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই, শনির জন্মলগ্নের সময় শনির চারপাশের বিপুল পরিমানের গ্যাসীয় কণা, পাথর, শিলা ইত্যাদি মহাজাগতিক বস্তু শনির প্রচন্ড মহাকর্ষ বলের প্রভাবে (যেহেতু শনি সৌরজগতের অন্যতম বড় গ্রহ) শনির চারপাশে আবর্তন শুরু করে, বর্তমানে শনির বলয় নাম জানি।
আরো পড়তে পারেন- কি হবে যদি পৃথিবীর ঘূর্ণন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ?
শনি গ্রহের বলয় কয়টি ?
যদি প্রশ্ন করা হয়, "শনি গ্রহের বলয় কয়টি?" তাহলে অনায়াসেই অনেক উত্তর দেবেন ১টি। আপাত দ্রৃষ্টিতে তাই মনে হয়। প্রথম দিকেও বিজ্ঞান মহল ভাবত শনির বলয় ১টি, কিন্তু এখন আমরা জানি শনির মোট বলয় আসলে অসংখ্য অর্থাৎ আমরা গুনে শেষ করতে পারবোনা। তবে আকারে বড় বলয় গুলোকে শুধু বিবেচনায় আনলে শনির মোট প্রধান বলয় হবে সাতটি। সেগুলো হলো যথাক্রমে D, C, B,A, F, E ও G (বলয় আবিষ্কারের উপর ভিত্তি করে এমনভাবে সাজানো হয়েছে). এসকল বলয়ের মাঝ আবার বিশাল ফাঁকা জায়গা। সে জায়গার নামগুলোও ভিন্ন। A থেকে B বলয়ের মধ্যকার ফাঁকা জায়গাটার নাম ক্যাসিনি ডিভিশন। আবার A ও F এর মধ্যকার ফাঁকা স্থানের নাম হলো রোশ। এসকল প্রধান বলয়গুলো শনি গ্রহ থেকে প্রায় ৭৩ কি.মি পর্যন্ত বিস্তৃত।
প্রথম দিকে বিজ্ঞান মহল ভাবত শনির বলয় ১টি, কিন্তু এখন আমরা জানি শনির মোট বলয় আসলে অসংখ্য অর্থাৎ আমরা গুনে শেষ করতে পারবোনা। তবে আকারে বড় বলয় গুলোকে শুধু বিবেচনায় আনলে শনির মোট প্রধান বলয় হবে সাতটি (৭)। সেগুলো হলো যথাক্রমে D, C, B,A, F, E ও G
শনি গ্রহের বলয় কি দিয়ে তৈরি ?
"শনি গ্রহের বলয় কি দিয়ে তৈরি ?" এই প্রশ্নের উত্তর ইতোমধ্যেই দেওয়া হয়েছে, তবে একটু ব্যাখ্যা করে বললে: শনি গ্রহের বলয় নিয়ে প্রথম দিকের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একক কঠিন স্তর মনে করলেও পরবর্তীতে বিজ্ঞানী "জিওভান্নি ক্যাসিনি" ১৬৭৫ দেখান যে আসলে শনির বলয় অনেকগুলো ছোট-বড় পাথর ও বরফের সমষ্টি। যাকে দূর থেকে দেখলে বিশাল একত্রিত বলয় মনে হয়.
বিজ্ঞানী "জিওভান্নি ক্যাসিনি" ১৬৭৫ দেখান যে আসলে শনির বলয় অনেকগুলো ছোট-বড় পাথর ও বরফের সমষ্টি
শনি ছাড়া আর কোন কোন গ্রহের বলয় আছে ?
হ্যা, আছে। বলয় গ্রহ শনি ছাড়াও আমাদের সৌরজগতে আরও ৩টি গ্রহ এমন আছে যাদের চারপাশে বলয় বিদ্যমান ,যথা: বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুন। বৃহস্পতির ০৪ টি বড় বলয়, ইউরেনাসের আছে ১৩টি সংকীর্ণ বলয়, আবার নেপচুনের মোট ৬টি চিকন রয়েছে। ("শনি ছাড়া আর কোন কোন গ্রহের বলয় আছে ?") এ নিয়ে "জ্ঞানীবাবা!" ভবিষ্যতে একটি লেকচার নিয়ে আসবে ইং শা আল্লাহ)
আশা করি "জ্ঞানী বাবা!"র আজকের লেখা থেকে পাঠকগণ কিছু হলেও জানতে পেরেছেন। কোনো তথ্যগত,বানানগত ত্রুটি হয়ে থাকলে পাঠক ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করছি।
"জ্ঞানী বাবা!" এর আজকের কুইজের প্রশ্ন:
কোন মহাজাগতিক বস্তুর ধ্বংসাবশেষ থেকে পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ সৃষ্টি হয়েছিল?
পৃথিবী যখন তৈরি হচ্ছিল তখন পৃথিবীর সাথে অন্য একটি ইনকমপ্লিট গ্রহের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে পৃথিবীর উপরিভাগ মহাকাশ ছড়িয়ে পড়ে এবং পৃথিবীর আশপাশে একটি সার্কেল তৈরি করে এবং সেগুলো মিলিত হয়ে চাঁদ রূপান্তরিত হয়।